লুট হওয়া পাথর ফেরত দিতে ৩ দিনের আলটিমেটাম দিয়েছিলেন সিলেটের নবাগত জেলা প্রশাসক মো. সারওয়ার আলম। এরপর থেকে কোম্পানীগঞ্জ থেকে লুট হওয়া সাদা পাথর নিজ খরচে বহন করে প্রশাসনের কাছে হস্তান্তর করছেন মানুষজন।
জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, মঙ্গলবার বিকেল ৫টার মধ্যে মজুত রাখা সাদা পাথর নিজ খরচে কোম্পানীগঞ্জের ভোলাগঞ্জে প্রশাসনের কাছে জমা দিলেই বিনাশর্তে দায়মুক্তি পাওয়া যাবে। এ সময়সীমার পর যাদের কাছে পাথর পাওয়া যাবে, তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সিলেটের জেলা প্রশাসক মো. সারওয়ার আলম সাংবাদিকদের বলেন, শনিবার বিকেল থেকে রোববার রাত ৮টা পর্যন্ত অন্তত শতাধিক মানুষ প্রায় ২ লাখ ঘনফুট সাদা পাথর স্বেচ্ছায় নিজ খরচে পরিবহন করে প্রশাসনের কাছে জমা দিয়েছেন।
সিলেট সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) খোশনূর রুবাইয়াৎ বলেন, স্থানীয় প্রশাসনের বেঁধে দেওয়া সময়ের প্রথম দিন সদর উপজেলার দুজন ব্যক্তি আটটি ট্রাকে করে তাদের কাছে মজুত থাকা ৮০০ ঘনঘুট পাথর নিজ খরচে ভোলাগঞ্জে পাঠিয়েছেন।
এর আগে যৌথ বাহিনীর অভিযানে ধোপাগুল এলাকা থেকে উদ্ধারকৃত ৫০ হাজার ঘনফুট সাদাপাথর অন্তত শ’খানেক ট্রাকে ভরে ভোলাগঞ্জে পাঠানো হয়েছে। এদিন (রোববার) সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত উপজেলায় যৌথ বাহিনী অভিযান চালিয়ে প্রায় ৬০ হাজার ঘনফুট পাথর উদ্ধার করেছে।
এছাড়া গোয়াইনঘাটের ইউএনও রতন কুমার অধিকারী সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, রোববার জৈন্তাপুর থেকে আরও সাড়ে ৫ হাজার ঘনফুট পাথর পাঠানো হয়েছে গোয়াইনঘাটে। ফেরত দেওয়া এসব পাথর জাফলং জিরো পয়েন্টে প্রতিস্থাপন করা হবে।
স্থানীয়ভাবে জানা গেছে, লুট হওয়া সাদাপাথরের একটি বিশাল অংশ সিলেটের বাইরে চলে গেছে। অনেকে পাথর লুটে নিয়েছেন। আর ব্যবসার জন্য অনেকে এসব লুটের পাথর কিনে মজুত রেখেছেন।
এদিকে, প্রশাসনের নির্দেশনা মোতাবেক যারা নিজ খরচে সাদাপাথর পর্যটনকেন্দ্র সংলগ্ন ভোলাগঞ্জে রুটের পাথর ফেরত দিয়ে যাচ্ছেন, তাদের নাম তালিকাভুক্ত করা হচ্ছে। সরাসরি লুটের সঙ্গে জড়িত না থাকলে এসব ব্যক্তিরা দায়মুক্তি পাবেন।
কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ইউএনও মো. রবিন মিয়া সাংবাদিকদের বলেন, আশপাশের মানুষজন সাদা পাথর ফিরিয়ে দিচ্ছেন। এ যাবৎ কী পরিমাণ পাথর ফেরত দেওয়া হয়েছে, তা এখনো ঠিকভাবে বলা যাচ্ছে না। কেবল স্থানীয় প্রশাসন এখন এসব পাথর গ্রহণ করছে। ফেরত দেওয়া এসব পাথর পুনরায় সাদাপাথর এলাকায় প্রতিস্থাপন করা হবে, যাতে পর্যটন এলাকাটি আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনা যায়। সেই চেষ্টা করছে প্রশাসন।
সিলেট সদর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) সরকার মামুনুর রশীদ সাংবাদিকদের বলেন, রোববার পর্যন্ত ২ দিনে সিলেট সদর উপজেলা থেকে ৯০ ট্রাক সাদা পাথর কোম্পানীগঞ্জে পাঠানো হয়েছে। এর মধ্যে কিছু পাথর অভিযানে জব্দকৃত। আর কিছু ব্যবসায়ী ফেরত দিয়েছেন।
এর আগে শনিবার জেলা প্রশাসন থেকে ঘোষণা দেওয়া হয় ভোলাগঞ্জের সাদা পাথর থেকে লুন্ঠিত পাথর মঙ্গলবার সন্ধ্যার মধ্যে নিজে খরচে পৌঁছে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। নির্ধারিত সময়ের পর কারো কাছে সাদা পাথর পাওয়া গেলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার হুশিয়ারি দেওয়া হয়।
জেলা প্রশাসন থেকে শনিবার একটি গণবিজ্ঞপ্তিও জারি করা হয় এবং পাথর অধ্যুষিত এলাকা কোম্পানীগঞ্জ ও গোয়াইনঘাটে মাইকিংও করা হয়।
সিলেটের জেলা প্রশাসক সারোয়ার আলম সাংবাদিকদের জানান, সিলেট সদর ও কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় অনেকে পাথর লুকিয়ে রেখেছেন। এসব পাথর উদ্ধারে দুই উপজেলায় স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে শনিবার অনুষ্ঠিত সভায় তিনটি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সিদ্ধান্তের মধ্যে রয়েছে, মঙ্গলবার (২৬ আগস্ট) বিকেল ৫টার মধ্যে লুণ্ঠিত সাদা পাথর যাদের কাছে মজুত আছে, তারা যেন নিজ খরচে কিংবা স্ব উদ্যোগে ভোলাগঞ্জ সাদাপাথর এলাকায় পৌঁছে দেন। যেহেতু জনপ্রতিনিধিরা সরকারের অংশ, তাই এ পাথর উদ্ধারে তাদেরও দায় রয়েছে। যার যার এলাকায় খোঁজখবর নিয়ে পাথর ভোলাগঞ্জে পৌঁছানোর বিষয়ে উদ্যোগ নিতে বলা হয়।
তবে নির্ধারিত সময়ের পর যেকোনো এলাকায় অভিযান চালিয়ে পাথর পাওয়া গেলে ওই এলাকার জনপ্রতিনিধিদের বিরুদ্ধেও আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে হুঁশিয়ারি দেন জেলা প্রশাসক।