ঠাকুরগাঁওয়ে স্বর্ণের লোভে দিনরাত মাটি খুঁড়েই চলেছে হাজার হাজার মানুষ

মোঃ শরিফ বিল্লাহ প্রকাশক ও সম্পাদক
মাটি খুঁড়লেই পাওয়া যেতে পারে স্বর্ণ। তাই কোনো দিকে না তাকিয়ে মাথা নিচু করে চলছে মাটি খনন। ঘটনাটি ঠাকুরগাঁও রাণীশংকৈল উপজেলার একটি ইটভাটায়। রাণীশংকৈল সদর থেকে পাঁচ কিলোমিটার দূরে বাচোর ইউনিয়নের রাজোর এলাকায় অবস্থিত আরবিবি ব্রিক্স ইটভাটা। এক মাসে আগে কথা উঠে এই ইটভাটায় স্তূপ করে রাখা মাটি খুঁড়লেই মিলছে স্বর্ণের বিভিন্ন অংশ। এ কথা ছড়িয়ে পড়লে সাধারণ মানুষ দিন–রাত সমানতালে মাটি খননে নেমে পড়েন। আজ শনিবার বিকেলে আরবিবি ইটভাটায় গিয়ে দেখা যায়, ইটভাটাটির পূর্ব দিকে দুটি ও পশ্চিম পাশে একটি মাটির স্তূপ রয়েছে। সেখানে বিভিন্ন শ্রেণি মানুষের জটলা। সে জটলার মধ্যেই ছোট শাবল ও কোদাল দিয়ে আস্তে আস্তে মাটি খনন করে বাছাই করছেন বয়স্ক, যুবক, কিশোর, কিশোরীসহ বিভিন্ন বয়সী নারী পুরুষেরা। এ সময় শ্রাবন্তী নামের এক নারীর সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, হরিপুর উপজেলার কামারপুকুর এলাকা থেকে দুই দিন ধরে এখানে এসে মাটি খনন করছেন। তিনি কোনো সোনা পাননি। কিন্তু তাঁর সামনে দুজন দুটি কানের দুল পেয়েছেন। নুরুল নামের এক তরুণ হরিপুর উপজেলা থেকে এসেছেন। তিনি জানান, সারা দিন মাটি খুঁড়েছেন, তবে সোনা পাননি। তিনি শুনেছেন অনেকে পেয়েছেন, তাই তিনিও মাটি খনন করছেন।
নানি আফরোজার সঙ্গে কিশোরী আঁখি এসেছে মাটি খুঁড়তে। সে জানায়, যদি স্বর্ণ খুঁজে পায়, তাহলে সেটি বিক্রি করে নতুন জামা–কাপড় কিনবে। এদিকে কাতিহার এলাকার লিটন আলী নামের এক যুবক স্বর্ণ পাওয়ার কথা নিশ্চিত করে বলেন, তিনি ও তাঁর বড় ভাই মাটি খনন করে ৩ ভরি ১০ আনা ৩৫ পয়েন্ট ওজনের একটি দুল পেয়েছিলেন। সেটি তাঁরা প্রায় সাড়ে ৩ লাখ টাকায় বিক্রি করেছেন। সেখানে কথা হয় কাতিহার এলাকার নারায়ণের সঙ্গে। তিনি বলেন, কাতিহারের পরিত্যক্ত শ্যামরাই কালীমন্দিরের আশপাশে অনেক দামি জিনিসপত্র মাটির নিচে রয়েছে। এটি প্রচলিত। সেই মন্দিরের আশপাশের জমি খনন করে এ মাটি আনা হয়েছে। কেউ একজন নাকি মাটি খননের সময় স্বর্ণের বালা পেয়েছে। সে কথা ছড়িয়ে পড়লেই তিনিও সবার মতো এসেছেন এসেছে স্বর্ণের সন্ধানে। আরবিবি ইটভাটার পরিচালক রুহুল আমিন বলেন, কাতিহার শ্যামরাই মন্দিরসহ আরও আশপাশ থেকে মাটি খনন করে ইটভাটায় স্তূপ করা হয়েছে। গুজব উঠেছে ওই মাটির স্তূপ থেকে নাকি স্বর্ণের জিনিস পাওয়া গেছে। এর পর থেকেই সাধারণ মানুষ দিন–রাত ওই মাটির স্তূপ খনন করে যাচাই–বাছাই শুরু করেছে। তবে কেউ স্বর্ণের কোনো অংশ পেয়েছে, এমন খবর তাঁর কাছে নেই। তবে সাধারণ মানুষকে ভাটার মালিক থামানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হচ্ছেন। মানুষ দলে দলে আসছেই। বাধ্য হয়ে তিনি মাটি খনন অনেকটা উন্মুক্ত করে দিয়েছেন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রকিবুল হাসান বলেন, মাটি খননের বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় প্রশাসন কাজ করছে। শিগগির এ ঘটনায় যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
নবীনতর পূর্বতন

Smartwatchs