
স্কুল-কলেজের ম্যানেজিং কমিটিতে দায়িত্ব পাওয়া শুরু করেছেন সরকারি কর্মকর্তারা। সোমবার (১ ডিসেম্বর) একযোগে রাজধানীর ২১৫টি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে সভাপতি নিয়োগ দিয়েছে সরকার। এর মধ্য দিয়ে রাজনৈতিক ব্যক্তিদের বাদ দেওয়া প্রক্রিয়া শুরু হলো। এর আগে এ পদে সরকারি কর্মকর্তাদের যুক্ত করার নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।
সরকারের সিদ্ধান্তে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কর্মরত শিক্ষক-কর্মচারীদের পাশাপাশি সচেতন নাগরিক এবং অভিভাবকরাও সন্তোষ প্রকাশ করেন। তবে বিষয়টি নির্বাচনের কাজে বাধাগ্রস্ত করবে— এমন নানা যুক্তি ও কারণ দেখিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের নেওয়া আলোচিত এ সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল- বিএনপি।
ম্যানেজিং কমিটি নিয়ে ইতোমধ্যে সরকারের পক্ষ থেকে পরিপত্র জারি করলেও আইনি জটিলতায় সেটি স্থগিত করা হয়েছে; ফলে পুরো বিষয়টি বাস্তবায়ন অনেকটাই অনিশ্চয়তায় পড়ে। যদিও শেষ পর্যন্ত সব শঙ্কা উড়িয়ে সরকারি কর্মকর্তাদের দিয়ে ম্যানেজিং কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া শুরু করেছে সরকার।
বিষয়টি নিয়ে কথা হয় এমপিওভুক্ত শিক্ষা জাতীয়করণ প্রত্যাশী জোটের সদস্য সচিব অধ্যক্ষ দেলাওয়ার হোসেন আজীজির সঙ্গে। দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে তিনি বলেন, সরকারি স্কুল-কলেজের ন্যায় বেসরকারি স্কুল-কলেজও রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত রাখা উচিত। অন্তর্বর্তী সরকার যে উদ্যোগ নিয়েছে; তা সবার মাঝে আনন্দের বার্তা বয়ে এনেছে। স্কুল-কলেজকে রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়নমুক্ত রাখার আহবান জানান তিনি।
এর আগে গত ১৬ নভেম্বর এ সংক্রান্ত একটি পরিপত্র জারি করা হয়। এতে বলা হয়, ‘মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড, ঢাকাসহ অন্যান্য শিক্ষা বোর্ড (নিম্ন মাধ্যমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা স্তরের বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের গভর্নিং বডি ও ম্যানেজিং কমিটি) প্রবিধানমালা, ২০২৪’ এর অনুচ্ছেদ ৬৯ অনুযায়ী, মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের বেসরকারি মাধ্যমিক-১ শাখা থেকে এটি জারি করা হয়েছে।
পরিপত্রে আরও বলা হয়, মহামান্য হাইকোর্ট ডিভিশনের রিট পিটিশন নম্বর- ১৬৭৫৭/২০১৫ মামলায় মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষাবিভাগ কর্তৃক গত ৮ সেপ্টেম্বর তারিখে জারিকৃত ‘মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড, ঢাকাসহ অন্যান্য বোর্ডের (নিম্ন মাধ্যমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা স্তরের বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের গভর্নিং বডি ও ম্যানেজিং কমিটি) প্রবিধানমালা, ২০২৪ (সংশোধনীসহ) অনুযায়ী এডহক কমিটি ও নিয়মিত কমিটি গঠন সংক্রান্ত পরিপত্রটি তিন মাসের জন্য স্থগিত করা হয়েছে।
এরই পরিপ্রেক্ষিতে এই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলে পরিপত্রে বলা হয়। জানা গেছে, ছাত্র-শ্রমিক-জনতার অভ্যুত্থানের মাধ্যমে গঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকার জন-আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নে প্রধান ছয়টি কমিশনসহ বিভিন্ন বিষয়ে যেসব সংস্কার কমিশন গঠন করে, সেসব কমিশন সরকারের কাছে সংস্কার প্রস্তাব দাখিল করেছে।
প্রস্তাবগুলোর মধ্যে একটি ছিল, সরকারি কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে কলেজ ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটি গঠন। এর আওতায় রয়েছে, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ ম্যানেজিং কমিটি গঠন সংক্রান্ত নীতিমালা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করবে; জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ভেটিং সম্পন্ন করে তা ফেরত পাঠাবে এবং মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ তা জারি করবে; নীতিমালা জারির এক মাসের মধ্যে কলেজ ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটি পুনর্গঠনের কাজ সম্পন্ন করতে হবে।