বাংলাদেশকে বহুবার অজগরের মুখে ফেলার চেষ্টা করা হয়েছে: রিজভী

 

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী   © 

‘বাংলাদেশকে বহুবার অজগরের মুখে ফেলার চেষ্টা করা হয়েছে। যেমন সিকিমকে গ্রাস করা হয়েছে, ভুটানকে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করা হয়েছে, তেমনি আমাদেরকেও গিলে খাওয়ার চেষ্টা হয়েছিল। শেখ হাসিনার মাধ্যমে সেই প্রভুরা আমাদের ইতিহাস, কৃষ্টি, সংস্কৃতি, ঐতিহ্য সবকিছু বিকৃত করতে চেয়েছিল। ‘স্বাধীনতার চেতনা’ নামের আবরণের নিচে তারা প্রকৃত ইতিহাসকে আড়াল করেছিল। কিন্তু ৭ নভেম্বরের চেতনা আবার সেই অন্ধকার দূর করেছে।

ঐতিহাসিক ৭ নভেম্বর ‘জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস’ উপলক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদলের আলোকচিত্র প্রদর্শনী অনুষ্ঠানে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী এসব কথা বলেন।

এসময় তিনি বলেন, আমরা ১৯৭১ সালে ১৬ ডিসেম্বর বিজয় অর্জন করলেও, তখন জাতির প্রকৃত মুক্তি হয়নি; মুক্তি হয়েছিল কেবল আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের। কিন্তু জাতির প্রকৃত মুক্তি এসেছিল ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর।

রিজভী বলেন, মানুষের মধ্যে যারা আলো ফোটানোর চেষ্টা করছেন, সেই সকল নেতৃবৃন্দ আজ এই স্টেজে বসে আছেন। আজকের এই আলোকচিত্র প্রদর্শনী কোনো সাধারণ প্রদর্শনী নয়—এটি ইতিহাসের প্রদর্শনী, এটি ঐতিহাসিক মুহূর্তগুলোর জীবন্ত প্রদর্শনী। কারণ এই দিনেই আমাদের স্বাধীনতার প্রকৃত মুক্তি ঘটেছিল।

তিনি আরও বলেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট যারা ক্ষমতায় আসেন, তারাও শেখ মুজিবের সরকারেরই অংশ ছিলেন—কেবল পদবির পরিবর্তন ঘটেছিল। এই পালাবদলের মধ্যেই ৭ নভেম্বর জনগণ তাদের মুক্তির দিশারী হিসেবে একজন মানুষকে পেলেন—শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান। তিনি যেমন ১৯৭১ সালে জাতিকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন, তেমনি ৭ নভেম্বরও জাতির দিশারী হিসেবে আবির্ভূত হন।

৭ নভেম্বরের আগে জাতির মধ্যে ভয় ও আতঙ্ক বিরাজ করছিল—আবার কি বাকশাল ফিরে আসবে? আবার কি বিরোধী রাজনৈতিক দল ও মত নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে? রাজনৈতিক নেতা-কর্মীরা কি ক্রসফায়ারের শিকার হবে? এই আশঙ্কা থেকেই জাতির মধ্যে এক প্রচণ্ড বিপ্লবের আগুন জ্বলে ওঠে। এরই বহিঃপ্রকাশ হলো ৭ নভেম্বরের বিপ্লব—এই দিনেই বাংলাদেশের প্রকৃত স্বাধীনতা ও মুক্তি ঘটে।

১৯৭২ সালে যারা ক্ষমতায় আসেন, তারা ‘বাংলাদেশি জাতীয়তা’ নয়, এক ধরনের আঞ্চলিক জাতীয়তার কথা বলেন, যার মধ্যে ভূমি, পতাকা, মাটি, পানি—আমাদের স্বতন্ত্র অস্তিত্বের প্রতিফলন ছিল না। শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ‘বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ’ ধারণার মাধ্যমে সেই সংকটের সমাধান করেন। এই নামের মধ্যে আমার ভূখণ্ড, আমার মানুষ, আমার কৃষ্টি, আমার সংস্কৃতি—সবকিছুই প্রতিনিধিত্ব পায়। তিনি আমাদের আত্মপরিচয়কে বিশ্বদরবারে মর্যাদার সঙ্গে তুলে ধরেন।”

তিনি আরও বলেন, ‘জিয়াউর রহমান বহুদলীয় গণতন্ত্র চালু করেন, গণতন্ত্রের পথচলা নিশ্চিত করেন। জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল আজ যে আলোকচিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন করেছে, তা কেবল একটি প্রদর্শনী নয়—এটি জীবন্ত ইতিহাসের প্রদর্শনী।

২০২৪ সালের ৫ আগস্টের আন্দোলনে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল তাদের অনবদ্য ভূমিকার মাধ্যমে সেই দুঃশাসনের অবসান ঘটিয়েছে। বহু ত্যাগ ও রক্তের বিনিময়ে ছাত্ররা রাস্তায় নেমে এক দারুণ পৈশাচিক ফ্যাসিবাদের পতন ঘটিয়েছে। তার প্রভুরাও তাকে রক্ষা করতে পারেনি; তাকে পালিয়ে যেতে হয়েছে।‘

শুক্রবার (৭ নভেম্বর) বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায়  আলোকচিত্র প্রদর্শনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন রিজভী ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব, সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছির ও ঢাবি শাখা ছাত্রদল সভাপতি  গণেশ চন্দ্র রায় সাহস ও সাধারণ সম্পাদক: নাহিদুজ্জামান শিপন ।

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব বলেন, ১৯৭৫ সালে সিপাহী জনতার যে বিপ্লব সংগঠিত হয়েছিল, ঠিক একইভাবে ২০২৪ সালেও আমরা আরেকটি গণঅভ্যুত্থান ও বিপ্লব প্রত্যক্ষ করেছি।  ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান বন্দিদশা থেকে শুধু শীর্ষ নেতৃত্বে পৌঁছাননি, বরং একটি বিভক্ত জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করেছিলেন।

কিন্তু দুঃখজনকভাবে, ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানের পরেও আমরা সেই জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠা করতে পারিনি। যেমন ১৯৭১ থেকে ১৯৭৫ সালের দুঃশাসনের ফলে এক ধরনের জনআকাঙ্ক্ষা সৃষ্টি হয়েছিল, তেমনি ২০০৯ থেকে ২০২৪ সালের দুঃশাসনও মানুষের মধ্যে একই রকম জনআকাঙ্ক্ষা তৈরি করেছিল। কিন্তু তার বাস্তবায়নে আমরা ব্যর্থ হয়েছি।

আজও একটি বিশেষ গোষ্ঠী জাতিকে বিভক্ত করার রাজনীতি চালিয়ে যাচ্ছে, যেখানে আমাদের উচিত ছিল ঐক্যবদ্ধ হয়ে শহীদদের স্বপ্নের বাংলাদেশ গঠন করা—একটি গণতান্ত্রিক ও স্বাধীন রাষ্ট্র, যেখানে গণতন্ত্র থাকবে, ন্যায়বিচার থাকবে।

রাকিব আশা প্রকাশ করে বলেন, ‘যেভাবে ১৯৭৫ সালের বিপ্লবের পর বাংলাদেশ স্বর্ণযুগে প্রবেশ করেছিল, তেমনি ইনশাআল্লাহ আসন্ন ফেব্রুয়ারির নির্বাচনের পরও আমরা বাংলাদেশের নতুন স্বর্ণযুগের অপেক্ষায় রয়েছি।‘

 

নবীনতর পূর্বতন

Smartwatchs