বাংলাদেশ বিরোধী প্রপাগান্ডঃ ইসলামপন্থীদের উত্থান নিয়ে উদ্বিগ্ন পঙ্কজ শরণ

 

বাংলাদেশের আভ্যন্তরিন পরিস্থিতি নিয়ে ভারতের গনমাধ্যমে নানা ভাবে প্রোপাগান্ডা চালিয়ে যাচ্ছেন দেশটির সাবেক কূটনীতিকরা। হাসিনার পতন ও পলায়নের পর বাংলাদেশের নতুন রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে তাদের উদ্বেগের শেষ নেই। কিন্তু হাসিনার দেড় দশকের নিপীড়নমুলক শাসনের ব্যাপারে তারা নীরব। শেখ হাসিনার পতনের পর বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে বার্তা সংস্থা এএনআইয়ের পডকাষ্টের সঙ্গে আলাপ করেছেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের সাবেক হাইকমিশনার পঙ্কজ শরণ। বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে তিনি মর্মাহত কিনা এমন প্রশ্নে পঙ্কজ শরণ বলেন, গত এক বছর ধরে বাংলাদেশে যা ঘটছে, তা অপ্রত্যাশিত না হলেও খুবই গুরুতর। পঙ্কজ শরনের মতে, বাংলাদেশে এখন মবতন্ত্র চলছে, কোন আইনের শাসন নেই। তার মতে, হাসিনার পতনের পর থেকেই মাঠে নেমেছে ইসলামপন্থিরা।

পঙ্কজ শরন দাবি করেন, বাংলাদেশ কোন অভিন্ন বা এক মতাদর্শের সমাজ নয়। দেশটি রাজনৈতিকভাবে বিভক্ত। এছাড়াও সেখানে আরো অনেক বিভক্তি আছে। তবে বর্তমানে ক্ষমতাসীনরা এ বিষয়ে একমত হবেন না। তিনি অনেকটা কটাক্ষ করে বলেন, ক্ষমতাসীনদের মতে বাংলাদেশে এখন স্বর্ণযুগ চলছে, কারণ তারা এখন হাসিনার শাসন থেকে মুক্ত। তারা এখন নিজের স্বকীয়তা খুঁজে পেয়েছেন, সমাজ এখন বাইরে থেকে চাপিয়ে দেওয়া নয়, নিজস্ব ধারায় চলছে। তবে বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে তিনি উদ্বিগ্ন বলে জানান সাবেক এই হাইকমিশনার।

বাংলাদেশে কে শাসন করছে তার ওপর নির্ভর করে ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক কেমন হবে। জিয়াউর রহমান, এরশাদ, খালেদা জিয়া বা শেখ হাসিনা, সব শাসনামলেই একটা বিষয়ে মিল রয়েছে। আর তাহলো সবকিছু ক্ষমতাসীনদের নিয়ন্ত্রণে থাকবে, বিরোধী দল বা মতের কোনো স্থান থাকবে না।

তার মতে, বাংলাদেশে এখন যা ঘটছে, তার ওপর কারো কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। সেখানে কিছু উগ্রপন্থী গোষ্ঠী ছত্রাকের মতো বেড়ে উঠছে। সবার স্বার্থের সংঘাত সামনে আসছে। শিক্ষার্থী, ইসলামপন্থি, বিএনপি এবং আওয়ামী লীগ সবারই সুনির্দিষ্ট স্বার্থ আছে। সেনাবাহিনীর সুনির্দিষ্টি স্বার্থ রয়েছে।

তার দাবি, বাংলাদেশে এখন মবতন্ত্র চলছে, কোন আইনের শাসন নেই। পঙ্কজ শরণ বলেন, বাংলাদেশে শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় থাকা ভারতের জন্য জরুরি।

একান্ত স্বাক্ষাতকারে বাংলাদেশে অন্তর্ভূক্তিমূলক নির্বাচনের ওপর জোর দেন তিনি। বলেন, তার আশা আগামী ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশে অন্তর্ভূক্তিমূলক, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।

সেনাবাহিনী নির্বাচন চাইলেও অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান ডক্টর ইউনুস তা চান কীনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বাংলাদেশে একমাত্র প্রতিষ্ঠান হচ্ছে সেনাবাহিনী, যা এখন কাজ করছে। পুলিশ প্রশাসন, বিচারব্যবস্থা সবাই সমঝোতা করেছে। আর এই শূণ্যতা পুরণ করতে মাঠে হাসিনার পতনের পর থেকেই মাঠে নেমেছে ইসলামপন্থিরা। পঙ্কজ শরণের মতে, ইসলামপন্থীরা শিক্ষার্থী বা বিএনপির চেয়ে অনেক বেশি সংগঠিত।

তিনি বলেন, ‘ইসলামপন্থিরা নিজেদেরকে এমনভাবে উপস্থাপন করছেন যেন, তারা নির্ভেজাল এবং একমাত্র তারাই সবকিছু ঠিক করতে পারবে। নিজেদের অবস্থান প্রতিষ্ঠিত করতে চাইছে তারা। এমনকি তারা বিএনপিকেও চ্যালেঞ্জ করছে। কারণ বিএনপি নিয়ে নানা বিতর্ক রয়েছে।’

বর্তমানে ভারতের উপ-জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা পঙ্কজ শরণ আরো বলেন, ‘বাংলাদেশে সবচেয়ে প্রতিষ্ঠিত দুই দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি দু’টি দলেই পরিবারতন্ত্র প্রচলিত। নতুন কোনো নেতৃত্ব তৈরি হয়নি। আর এসবকিছুর মাঝখানে আবির্ভূত হয়েছে জামায়াত, শিক্ষার্থীরাও মাঠে আছেন। জামায়াত শুধু আবির্ভূতই হয়নি এবারের নির্বাচনে ইতিহাসের সর্বোচ্চ আসন পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে তাদের।’

তার মতে, ‘বাংলাদেশ একটি নতুন ধাপ পার করছে। পরিস্থিতি কোন দিকে গড়ায় সে দিকে খেয়াল রাখতে হবে। আগে থেকে ধারনা করা কঠিন প্রকৃতপক্ষে কী ঘটবে।’

এএনআইয়ের সাথে দেয়া এই সাক্ষাতকারে পঙ্কজ শরন হাসিনার ফ্যাসিবাদি শাসনের বিরুদ্ধে মানুষের বিক্ষোভ ও হাজারো মানুষকে হত্যার বিষয়ে কোনো কথাই বলেননি। তিনি অর্ন্তুভুক্তিমুলক নির্বাচনের কথা বললেও হাসিনার অধীনে যে তিনটি নির্বাচন যে মানুষ কোনো ভোট দিতে পারেনি সে ব্যাপারে ছিলেন নীরব।

নবীনতর পূর্বতন

Smartwatchs