ভারতে পাচার হওয়া খুলনার এই কিশোরী ৩ মাসে ২২৩ বার ধর্ষণের শিকার


 ‘কিশোরীটি যখন আমাকে বলছিল যে গত তিন মাসে ২২৩ জন পুরুষ তাকে ধর্ষণ করেছে, ওর চোখে মুখে আতঙ্কের ছাপ স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছিলাম।’ কথাগুলো বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন মহারাষ্ট্রের স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন 'হারমোনি ফাউন্ডেশন'-এর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি আব্রাহাম মাথাই। (খবর বিবিসি)

আব্রাহাম মাথাই জানান, বাংলাদেশের খুলনার বাসিন্দা ১২ বছর বয়সী ওই কিশোরীকে পাচার করে দেওয়া হয়েছিল ভারতে। পাচারকারীরা কিশোরী জানিয়েছে, তাকে জোর করে, অত্যাচার চালিয়ে যৌন সংসর্গ করতে বাধ্য করা হতো। গুজরাত ও মহারাষ্ট্রের মীরা-ভায়ান্দার এলাকায় তার ওপরে চলেছিল এই অমানুষিক অত্যাচার।

আরেক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন 'এক্সোডাস রোড ইন্ডিয়া ফাউন্ডেশন' এবং পুলিশের মানবপাচার রোধ ইউনিট এক অভিযান চালিয়ে ২৩শে জুলাই ওই কিশোরীটিকে উদ্ধার করে মহারাষ্ট্রের পালঘর জেলার নাইগাঁও থেকে।

গত সপ্তাহে তেলেঙ্গানার হায়দ্রাবাদ শহরে আরেক বাংলাদেশি কিশোরী স্থানীয় থানায় এসে সাহায্য চায়। ঢাকার বাসিন্দা ১৫ বছরের ওই কিশোরীকে তারই এক প্রতিবেশী ভারতে নিয়ে এসে দেহ ব্যবসায় নামিয়েছিল বলে অভিযোগ করে। ওই কিশোরীর কাছ থেকে খবর পেয়ে হায়দ্রাবাদ পুলিশ তল্লাশি চালিয়ে একটি আন্তর্জাতিক যৌন ব্যবসার চক্র খুঁজে পেয়েছে।

মহারাষ্ট্রের পালঘর থেকে যে বাংলাদেশি কিশোরীকে উদ্ধার করা হয়েছে, তার বাড়ি খুলনার আমিরপুরে। তার পরিবারের সঙ্গে এখনো যোগাযোগ করে উঠতে পারেনি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কর্মকর্তারা।

'হারমোনি ফাউন্ডেশন'-এর সভাপতি আব্রাহাম মাথাই বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন, ‘ওই কিশোরীর সঙ্গে কথা বলে আমি জানতে পারি যে সে স্কুলের পরীক্ষায় একটি বিষয়ে ফেল করেছিল। বাড়িতে বাবা-মা বকবেন, সেই ভয়ে সে বাড়ি থেকে পালিয়ে যায়।’

‘এক পরিচিত নারী কিশোরীটিকে কাজের লোভ দেখিয়ে সীমান্ত পার করিয়ে কলকাতায় নিয়ে আসে। সেখানেই তার জাল ভারতীয় পরিচয়পত্র বানানো হয় এবং তারপরে বিমানে চাপিয়ে তাকে মুম্বাই নিয়ে আসা হয়।’

তিনি বলছিলেন, ‘মুম্বাই থেকে তাকে গুজরাতের নাদিয়াদের নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। সেখানে এক ব্যক্তি ওই কিশোরীকে কৃত্রিমভাবে শারীরিক গঠন বৃদ্ধির ইনজেকশন দেয়, তাকে ধর্ষণ করে ভিডিও করে রাখা হয়। ওই ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে যৌন সংসর্গ করতে বাধ্য করা হয়।’

‘যে পাচারকারীরা ধরা পড়েছে, আর ওই কিশোরী – সবার সঙ্গে কথা বলে জানতে পেরেছি যে গত তিন মাসে ২২৩ জন পুরুষ তাকে ধর্ষণ করেছে। ওই কিশোরীটিকে গুজরাতের চারটি হোটেল এবং পাঁচটি ভিন্ন ভিন্ন খামারবাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। এরপরে তাকে মহারাষ্ট্রে নিয়ে আসা হয়,’ বলছিলেন মি. কুম্বলে।

দক্ষিণ ভারতের হায়দ্রাবাদ শহরের পুলিশ গত শুক্রবার একটি ঘটনার কথা জানিয়েছে, যেখানে ১৫ বছর বয়সী এক বাংলাদেশি কিশোরী নিজেই সাহায্য চেয়ে থানায় এসে হাজির হয়েছিল।

সেদিন সকাল সোয়া আটটা নাগাদ বান্ডলাগুড়া থানায় হাজির হয় ওই কিশোরী। সে পুলিশকে জানায় যে তার বাড়ি ঢাকায় এবং তার এক প্রতিবেশী কলকাতায় বেড়াতে নিয়ে যাবে বলে তাকে পাচার করে দেয় এবছর ফেব্রুয়ারি মাসে।

চন্দ্রায়নগুট্টার সহকারী পুলিশ কমিশনার এ সুধাকর সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন যে কলকাতায় বেড়াতে নিয়ে আসার নাম করে ওই কিশোরীকে হায়দ্রাবাদে নিয়ে এসে জোর করে যৌনকর্মে নামানো হয়। তার দেওয়া তথ্যের ওপরে ভিত্তি করে বান্ডলাগুড়া ও মেহদিপটনমের দুটি পৃথক বাড়িতে তল্লাশি চালায় পুলিশ। ওই চক্রের সদস্য দুই নারীকে গ্রেফতার করার সঙ্গে সঙ্গেই পশ্চিমবঙ্গের তিনজন নারীকেও উদ্ধার করা হয়, যাদের জোর করে যৌনকর্মে নামানো হয়েছিল।

এছাড়া একজন অটোরিকশা চালককেও গ্রেফতার করা হয়েছে, যে ওই বাংলাদেশি কিশোরী এবং অন্য নারীদের 'খদ্দের'দের কাছে নিয়ে যেত। প্রতিটা 'খদ্দের'কে গ্রেফতারের দাবি জানিয়ে হারমোনি ফাউন্ডেশনের আব্রাহাম মাথাই বলছিলেন, ‘ওইটুকু বাচ্চা মেয়ে, ষষ্ঠ কি সপ্তম শ্রেণিতে পড়ত। পরীক্ষায় ফেল করে বকা খাওয়ার ভয়ে সে বাড়ি থেকে পালিয়েছিল। অথচ তারই এক পরিচিত নারী এইভাবে তার কৈশোরটা ছিনিয়ে নিল!’

‘আমি পুলিশের কাছে দাবি জানিয়েছি প্রতিটা পুরুষ খদ্দের, যাদের এই কিশোরীর কাছে পাঠিয়েছিল চক্রের মাথারা, সেই সব খদ্দেরকেও গ্রেফতার করতে হবে।’

‘প্রতিটা খদ্দের যদি ধরা পড়ে কঠোর শাস্তি পায়, তবেই একটা কড়া বার্তা যাবে যে কিশোরীদের ধর্ষণ করলে কী শাস্তি পেতে হয়। তবে যদি কিছুটা রাশ টানা যায়,’ বলছিলেন আব্রাহাম মাথাই।

শ্যাম কুম্বলের কথায়, বাংলাদেশ থেকে বহু কিশোরী এবং নারীকে পাচার করে মহারাষ্ট্রে নিয়ে আসা হচ্ছে। গত পাঁচ বছরে শুধু তার সংগঠনই ৫০ জনেরও বেশি বাংলাদেশি নারী ও কিশোরীকে উদ্ধার করেছে।

‘শুধু আমাদের একটা সংগঠনই যদি মহারাষ্ট্রে এত জন পাচার হওয়া নারী ও কিশোরীকে উদ্ধার করে থাকতে পারি, তাহলে ভাবুন, অন্য অনেক সংস্থাও কাজ করে, তারাও উদ্ধার কাজ চালায়, সংখ্যাটা পুরো দেশে কত হতে পারে!’

‘পুণের যৌনপল্লী বলে পরিচিত বুধওয়ারপেটে অন্তত হাজার দশেক বাঙালি নারী যৌনকর্মে জড়িত। এদের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের নারীরা যেমন আছেন, তেমনই বাংলাদেশ থেকে পাচার হয়ে আসা নারীরাও আছেন,’ বলছিলেন মি. কুম্বলে।

নবীনতর পূর্বতন

Smartwatchs