রাজধানীর উত্তরা দিয়াবাড়ির মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ এখন কোলাহলহীন নিস্তব্ধ এক প্রাঙ্গণ। এখানে প্রতিদিন গুঞ্জরিত হতো শতশত শিশুর প্রাণচঞ্চল কণ্ঠস্বর, এখন ছড়িয়ে আছে পুড়ে যাওয়া বই, ভাঙা ডেস্ক আর হাহাকারের ছায়া। গত সোমবার একটি প্রশিক্ষণ যুদ্ধবিমান মাইলস্টোনের একাডেমিক ভবনে বিধ্বস্ত হওয়ার পর থেকে থেমে গেছে শিশুর হাসি, থামেনি শুধু স্বজনহারাদের আহাজারি।
বিকট বিস্ফোরণের শব্দে ভেঙে যাওয়া নীরবতা আজও আচ্ছন্ন করে রেখেছে ওই এলাকা। যন্ত্রণায় কাতর আহত ও দগ্ধ শিশুদের কান্না আর হাসপাতালের করিডোরে দিশেহারা মা-বাবার ছুটোছুটি, পুরো পরিবেশটাকেই ভারি করে তুলেছে।
সোমবারের ভয়াবহ দুর্ঘটনায় গতকাল মঙ্গলবার পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা ৩১ জনে পৌঁছেছে বলে জানিয়েছে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর)। তবে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী মৃতের সংখ্যা ২৮। আহত অবস্থায় চিকিৎসাধীন রয়েছে ৬৮ জন। এই নিহত-আহতদের সিংহভাগই ছিল মাইলস্টোন স্কুলের শিক্ষার্থী।
নুসরাতের পরিবারের সাথে কথা বলে জানা যায়, তিন বোনের মধ্যে সে ছিল সবার ছোট। নতুন জামা পরতে ভালোবাসা, খেতে ভালোবাসা, ঘুরতে ভালোবাসা সব মিলিয়ে সে ছিল প্রাণোচ্ছল এক শিশু। পরিবারের সঙ্গে কদিন আগেই ঘুরে এসেছিল কক্সবাজার। সেই হাসিমুখের স্মৃতি আজ ছবি হয়ে গেছে, স্মৃতির অ্যালবামে বন্দি হয়ে গেছে নুসরাত।
নুসরাতের বাবা আবুল হোসেন বলেন, ‘আমার আদরের মাইয়া খুব সুন্দর আছিল। ওর শরীর তেমন পোড়ে নাই। ধোঁয়ায় মারা গেছে। ভবনের নিচতলায় ছিল।’ বলতে বলতেই থেমে যান তিনি, ভেঙে পড়েন আবেগে।
ঘটনার দিন বিকট শব্দ শুনে উত্তরা দিয়াবাড়ির মেট্রোরেল ডিপোর পাশে থাকা নিজ বাসা থেকে ছুটে গিয়েছিলেন স্কুলে। মেয়েকে খুঁজে বেড়িয়েছেন এক হাসপাতাল থেকে আরেক হাসপাতালে। সন্ধ্যায় সিএমএইচের মর্গে সাদা কাপড়ে ঢাকা মেয়ের নিথর দেহ দেখেন তিনি।
সেই মুহূর্তের বর্ণনা দিতে গিয়ে গলা ভারি হয়ে আসে আবুল হোসেনের, ‘কালকে যখন শব্দ শুনি, দৌড়াইয়া যাইয়া দেখি, আগুন আর আগুন। ও তো ক্লাস শেষ করে কোচিংয়ের জন্য অপেক্ষা করতেছিল। সব শেষ হইয়া গেল। সুন্দর সুন্দর জামা পরতে পছন্দ করত, যা চাইছে তা–ই খাওয়াইছি।’
তিনি আফসোস করে বলেন, ‘ভবনের যদি আর কোনো সিঁড়ি বা গেট থাকত, তাহলে অনেকেই বের হতে পারত।’
শাকিল বলেন, ‘সকাল থেকে বিকেল তিনটা–চারটা পর্যন্ত এই ছোট বাচ্চাদের তারা ধরে রাখে। কাল যদি ছুটির সঙ্গে সঙ্গে কোচিংয়ের জন্য অপেক্ষা না করে বের হয়ে যেত, তাহলে শিশুরা বেঁচে যেত।’