লতিফ সিদ্দিকী ও ঢাবি অধ্যাপক কার্জনসহ ডিবি হেফাজতে ১৫ জন সন্ত্রাসবিরোধী আইনে গ্রেপ্তার

আবদুল লতিফ সিদ্দিকী ও অধ্যাপক শেখ হাফিজুর রহমান কার্জন  © সংগৃহীত ও সম্পাদিত

রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) আয়োজিত মুক্তিযুদ্ধ ও সংবিধানবিষয়ক গোলটেবিল আলোচনা থেকে আটক আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কৃত নেতা আবদুল লতিফ সিদ্দিকী ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক শেখ হাফিজুর রহমান কার্জনসহ ১৫ জনকে গ্রেপ্তার দেখাবে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। তাদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা করা হচ্ছে বলে গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন ডিবির নতুন প্রধান মো. শফিকুল ইসলাম।

বৃহস্পতিবার (২৮ আগস্ট) ডিআরইউর শফিকুল কবির মিলনায়তনে ‘আমাদের মহান স্বাধীনতাযুদ্ধ এবং বাংলাদেশের সংবিধান’ শীর্ষক এই গোলটেবিল আলোচনার আয়োজন করে ‘মঞ্চ ৭১’ নামের একটি সংগঠন। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকার কথা ছিল গণফোরামের ইমেরিটাস সভাপতি ড. কামাল হোসেনের। তবে তিনি এবং সভার অন্যতম আয়োজক আইনজীবী জেড আই খান পান্না দেরিতে পৌঁছানোর কারণে সভা শুরুতে বিলম্ব হয়।

বেলা ১১টার দিকে অনুষ্ঠান শুরু হলে এতে যোগ দেন ইতিহাসবিদ ড. সৈয়দ আনোয়ার হোসেন, অধ্যাপক মেসবাহ কামাল, সাংবাদিক মাহবুব কামাল, সাবেক সংসদ সদস্য আবদুল লতিফ সিদ্দিকী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক শেখ হাফিজুর রহমান কার্জনসহ অনেকে। সভাপতিত্ব করেন অধ্যাপক আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ বীর প্রতীক।

বক্তব্যে অধ্যাপক কার্জন বলেন, “একটা শক্তি মুক্তিযুদ্ধকে, একাত্তরকে চব্বিশের মুখোমুখি দাঁড় করাতে চায়। তারা বাংলাদেশের বিরোধী শক্তি। তারা বাংলাদেশের সংবিধানকে ছুড়ে ফেলে দিতে চায়। বাংলাদেশকে নাই করে দেওয়ার পেছনে এই শক্তি জামায়াত-শিবির। আর তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে কিছু বিভ্রান্ত বাম তাত্ত্বিক।”

তার বক্তব্য শেষ হওয়ার পরপরই একদল ব্যক্তি হট্টগোল শুরু করে ‘আবু সাঈদ মুগ্ধ, শেষ হয়নি যুদ্ধ’, ‘জুলাইয়ের হাতিয়ার, গর্জে উঠুক আরেকবার’, ‘লীগ ধর, জেলে ভর’ ইত্যাদি স্লোগান দিতে দিতে অনুষ্ঠানস্থলে ঢুকে পড়ে। তাদের কেউ লাঠিসোঁটা হাতে নিয়ে মঞ্চে উঠে পড়েন এবং এক পর্যায়ে দরজা বন্ধ করে দেন। আয়োজকদের সঙ্গে হাতাহাতি ও লাঞ্ছনার ঘটনাও ঘটে। নিজেদের “জুলাই যোদ্ধা” পরিচয় দেওয়া এই ব্যক্তিরা লতিফ সিদ্দিকীর উদ্দেশে চিৎকার করে বলেন, “তুই ফ্যাসিস্ট পুনর্বাসন করতে আসছিস। নাস্তিক কোথাকার! তুই হজ নিয়ে কটূক্তি করিস।”

পরিস্থিতি উত্তপ্ত হলে পুলিশ এসে লতিফ সিদ্দিকী ও অধ্যাপক কার্জনসহ অন্তত ১০ জনকে নিরাপত্তার স্বার্থে গোয়েন্দা পুলিশের কার্যালয়ে নিয়ে যায়। পরে তাদের সবাইকে ডিবি হেফাজতে রাখা হয়।

রমনা বিভাগের ডিসি মাসুদ আলম সাংবাদিকদের বলেন, “লতিফ সিদ্দিকীসহ কয়েকজনকে ডিবি হেফাজতে নেওয়া হয়েছে; মূলত উনাদের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করেই এ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এখন সিনিয়রদের সঙ্গে কথা বলে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।”

অন্যদিকে, নিজেদের “চানখাঁরপুলের জুলাই যোদ্ধা” পরিচয় দেওয়া আল আমিন রাসেল বলেন, “পতিত আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা জড়ো হয়ে ষড়যন্ত্র করছেন, যা আমরা হতে দিতে পারি না।”

জুলাই যোদ্ধা পরিচয় দেওয়া আরেকজন, পল্টন থানা জামায়াতে ইসলামীর নেতা শামীম হোসাইন বলেন, “ফ্যাসিবাদ বিভিন্ন মোড়কে পুনর্বাসনের চেষ্টা করছে। উনি (লতিফ সিদ্দিকী) হজ নিয়ে কটূক্তি করেছেন। বিগত ১৫ বছর বিএনপি-জামায়াতের ওপর কত নির্যাতন চালানো হয়েছে। অথচ অভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে এ ধরনের অনুষ্ঠান করার অনুমতি কেন দেওয়া হলো, তার জবাব দিতে হবে।”

এদিকে, ডিবি হেফাজতে থাকা মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক আবদুল লতিফ সিদ্দিকী ও অন্যদের মুক্তি দাবি করেছেন কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী। বৃহস্পতিবার বিকেলে টাঙ্গাইলের সোনার বাংলায় নিজ বাসভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ দাবি জানান।

নবীনতর পূর্বতন

Smartwatchs