গণঅভ্যুত্থানে কাদেরকে বক্তব্য লিখে দেওয়া শিক্ষার্থীকেও ছাত্রলীগ ট্যাগ কাদেরের



 জুলাই গণঅভ্যুত্থানে নিজের বক্তব্য ও প্রেস রিলিজ লিখে দেওয়া রায়হান উদ্দিন নামের এক শিক্ষার্থীকে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ ট্যাগ দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে সাবেক সমন্বয়ক ও গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) শাখার সভাপতি আব্দুল কাদেরের বিরুদ্ধে। ভুক্তভোগী ওই শিক্ষার্থী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্যার এ এফ রহমান হলের ২০১৮-১৯ সেশনের শিক্ষার্থী।


রবিবার (৩ আগস্ট) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্টে ভুক্তভোগী রায়হান এ অভিযোগ করেছেন। পোস্টে কাদেরের সঙ্গে কথোপকথনের তিনটি স্ক্রিনশটও যুক্ত করেছেন তিনি।


আব্দুল কাদের তার ফেসবুকে লিখেছেন, আরেকজন আছেন এমন। এ এফ রহমান হলের ২০১৮-১৯ সেশনের রায়হান উদ্দিন। যে ছাত্রলীগের এক্টিভ কর্মী ছিলেন। মেধাবী হওয়ার দরুন হল ক্যান্ডিডেটের বক্তব্যগুলো যিনি নিজে লিখে দিতেন, সারাক্ষণ ক্যান্ডিডেটের আগেপিছে থাকতেন, কাউকে ভিড়তে দিতেন না। এফ রহমানের হলের কুখ্যাত ছাত্রলীগ সভাপতি রিয়াজের একনিষ্ঠ অনুসারী এই রায়হান ৫ তারিখের পরে শিবিরের বড় নেতা হিসেবে হাজির হয়েছেন। আগের ফেসবুক আইডি বাদ দিয়ে এখন নতুন আইডি চালান। তবে আগের আইডি এবং তার কৃতকর্ম মুছে ফেলতে পারেন নাই। এখনো আছে।



পরে রায়হান উদ্দিন তার ফেসবুক লিখেন, আব্দুল কাদের নোংরামি করতে গিয়ে আমাকে নিয়ে কিছু মিথ্যা কথা লিখেছে। ছোটলোকদের মতো আমি কখনো ফেসবুকে এসব নিয়ে লিখি না এবং লেখার প্রয়োজনও মনে করি না। রাজনৈতিক ও মতাদর্শিক বিষয়কে আমি মতাদর্শিকভাবেই ডিল করতে বিশ্বাসী। কিন্তু কিছু না লিখলে মনে হবে ছোটলোকদের নোংরামিই সত্য। যদিও এসব নোংরামি সামনে আরও হবে। আমাকে নিয়েই কেন কাদের এটা লিখলো, আমি জানি। কারণ কাদেরদের আমাকে আদর্শিকভাবে মোকাবিলা করার সৎ সাহস নেই। কিছুদিন আগে থেকেই এসব নোংরামি দেখেও চুপ ছিলাম।


‘‘কাদের লিখেছে আমি নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের হল সভাপতি রিয়াজের বক্তব্য লিখে দিতাম। ছাত্রলীগের নেতাদের তোষামোদ করতাম আর ছাত্রলীগের নেতাদের আশেপাশে কাউকে ভিড়তে দিতাম না।’’


কাদেরের মিথ্যা নিয়ে রায়হান তার বক্তব্য তুলে ধরে বলেন, ২০২২ সালের পহেলা আগস্ট প্রোগ্রামে না যাওয়া, গেস্টরুমে না আসা ও মুজিবের বিরুদ্ধে বলায়, হল নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের সভাপতি রিয়াজের নির্দেশনায় ছাত্রলীগ আমাকে সারারাত মানসিক নির্যাতন করে হল থেকে বের করে দেয়। আমি এই ট্রমা অনেকদিন ভুলতে পারিনি। এখনো সেই রাতের কথা মনে উঠলে আঁতকে উঠি। আমরা যখন ‘শিবির’ ট্যাগ খেয়ে হল থেকে বিতাড়িত হই, তখন নয়া বিপ্লবী কাদেরের সহযোদ্ধারা ছাত্রলীগের পদবি ধারণ করে বসে ছিলেন।


তিনি বলেন, রিয়াজ সভাপতি হওয়ার পর আমি যেহেতু মোটামুটি বক্তৃতা দিতে পারতাম, তাই আমার কাছে বক্তৃতা নিয়ে পরামর্শ চাইতো। আমি তাকে বিভিন্ন বিষয়ে পরামর্শ দিয়েছি—এটা অপরাধ হল কীভাবে? আমি তো ডিবেটে বহুজনকে পরামর্শ দিয়েছি। কিন্তু তাকে লিখে দিয়েছি—এইটা যদি প্রমাণ দেখাতে পারে, আমি জুতার মালা গলায় দিবো। আর লিখে দিলেও সেটা অপরাধ কীভাবে হল? আমি তো বহু লোককে ক্লাসেও পড়িয়েছি যারা ছাত্রলীগ করতো। এর আগেও ‘শিবির’ ট্যাগ দিয়ে দুইবার হল থেকে সাময়িকভাবে বের করে দিয়েছিল।


তিনি আরও বলেন, ২০২০ সালের আগস্ট পর্যন্ত আমি ফেসবুকে ছাত্রলীগের পোস্ট করেছি। আমার আগের একটা আইডি ছিল, যেটা এখনো আছে। সেখানে আমি পোস্ট করতাম—করতে হতো। নিয়মিত প্রোগ্রাম, মিছিল, গেস্টরুম করতে হয়েছে। করোনা পরবর্তী হলে উঠার পর আমি ছাত্রলীগের প্রোগ্রাম ও গেস্টরুমে যাওয়া থেকে বিরত থাকি। ফলে বেশ কবার সিঙ্গেল গেস্টরুম ও হল থেকে বের করে দেয় (ওই আইডি আমার বেহাত হয়ে গেছে)।


‘‘ডিবেটিং ক্লাবের কমিটিতে সভাপতি হওয়ার পথ সুগম করতে আমাকে অনেকেই পরামর্শ দিয়েছিল ছাত্রলীগের পদ নিতে, কিন্তু আমি পদ নিই নাই। আমি নিজের যোগ্যতা ও দক্ষতায় সভাপতি হয়েছি। এরপর ছাত্রলীগের পাণ্ডারা নানাভাবে আমাকে পদ থেকে বহিষ্কার করার চেষ্টা করে। ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে এক পর্যায়ে ছাত্রলীগের কথা না শুনায় ডিবেটিং ক্লাবের সব কার্যক্রম থেকে একপ্রকার অবাঞ্ছিত করে দেয়। সেইসব এভিডেন্স এখনো আছে। আমার সেক্রেটারি মেহেদি সাক্ষী।

আমি গেস্টরুমে কেমন আচরণ করেছি, সেটা জুনিয়ররাই সাক্ষ্য দিবে। অনেককেই অনেক সময় বকা দিয়েছি—এইটা অস্বীকার করবো না। আমার জানামতে একদিন মুখ দিয়ে অশালীন শব্দ বের হয়েছিল, সেদিনই তার সাথে ব্যক্তিগতভাবে আমি মাফ চেয়েছি। আর বাকি সময় কারো অধিকার হরণ করিনি। ২০২০ সাল পর্যন্ত ছাত্রলীগের প্রোগ্রাম করতে হয়েছে—হলের সবাই বাধ্য হয়ে করেছে। ফেসবুকে পোস্টও করতে হয়েছে—সবাইকে করতে হয়েছে।’’



সবশেষে তিনি লেখেন, কাদের ডাকসুর আগে এই নোংরা খেলায় মেতে উঠে আমাকে দমাতে পারবে ভেবে থাকলে ভুল করবে। কাদেরকে বলবো—ভিপি হতে চাইলে এইসব ছোটলোকি ছেড়ে আদর্শিকভাবে মোকাবিলা করার সৎ সাহস থাকতে হবে। কাদের যাদের প্রেসক্রিপশনে এইসব নোংরা খেলা করছে, তাদের সুন্দর ভবিষ্যৎ কামনা করছি।


‘‘আর প্রিয় কাদের, গণঅভ্যুত্থানের সময় তোমার অনেক বক্তব্য ও প্রেস রিলিজ আমার লেখা। তুমি যখন সাদিক ভাইকে একটা বক্তব্য রেডি করে দেওয়ার জন্য মেসেজ দিতে, তখন ভাই আমাকে তোমার মেসেজ ফরওয়ার্ড করে লিখে নিতে বলতেন। তো তোমার বক্তব্য লিখে দিয়েছি বলে কি তোমার ছোটলোকি ও নোংরামির দায় আমাকে নিতে হবে?’’


এই পোস্টের কমেন্টে রায়হান কিছু ছবি সংযুক্ত করেন। সেখানে দেখা যায়, কাদের আন্দোলনের সময় শিবির নেতা সাদিক কায়েমকে মিডিয়াতে দেওয়ার জন্য বিভিন্ন সময়ে বক্তব্য লিখে দিতে বলেন। সাদিক কায়েম তখন রায়হানকে সেগুলো ফরওয়ার্ড করেন। সেই মেসেজ উত্তরে রায়হান বক্তব্য লিখেও পাঠান৷

নবীনতর পূর্বতন

Smartwatchs