৫ আগস্টের পর ক্ষমতার বিরোধে দুই বন্ধু হয়ে গেলেন শত্রু, ঘটে গেলো জোড়া খুন

 BV LIVE NEWS 



নারায়ণগঞ্জের বন্দরে অটোস্ট্যান্ড দখল ও আধিপত্য বিস্তার নিয়ে বিএনপির দুই পক্ষের দ্বন্দ্ব ও হামলায় পরপর দুটি হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এতে বন্দর থানা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক মেহেদী হাসান (৩৮) প্রাণ হারিয়েছেন। তিনি বিএনপির রাজনীতিতে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছেন। তবে নিজেদের মধ্যে দ্বন্দ্বের কারণে তার প্রতিপক্ষ হয়ে ওঠেন তার এক সময়ের রাজনৈতিক সহযোদ্ধা রনি। সেই দ্বন্দ্বের এক পর্যায়ে তাকে হত্যা করা হয়। অপরদিকে এই দ্বন্দ্বের জেরে রনি গ্রুপের সদস্য পারভেজের ওপর আক্রোশ থেকে তার বাবা ও রাজমিস্ত্রি আবদুল কুদ্দুসকে (৬০) কুপিয়ে হত্যা করা হয়।

রবিবার (২২ জুন) বিকালে সরেজমিনে বন্দর উপজেলার শাহী মসজিদ ও হাফেজীবাগ এলাকা ঘুরে এমন নানা তথ্য পাওয়া গেছে।

সরেজমিনে ঘুরে জানা গেছে, টানা দুই দিন ধরে বিএনপির দুই পক্ষের হামলা, সংঘর্ষ ও দুটি হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় পুরো এলাকা থমথমে। অনেক দোকান-পাট বন্ধ। তবে কয়েকটি দোকান খুললেও দোকানিরা আছেন ভয়ে-আতঙ্কে। পুরো এলাকাজুড়ে পুলিশের টহল। অন্যদিকে নিহতদের দুই বাড়িতে চলছে শোকের মাতম। 

বন্দরের হাফেজীবাগ এলাকায় নিহত আব্দুল কুদ্দুসের বাড়িতে চলছে শোকের মাতম। তার মেয়ের জামাতা মিনার হোসেন বলেন, কুদ্দুস পেশায় একজন রাজমিস্ত্রি। তার সঙ্গে কারও কোনও বিরোধ ছিল না। তবে তার ছেলে পারভেজ এলাকার লোকজনের সমস্যা হলে প্রতিবাদ করতে যেত। এতে পারভেজের সঙ্গে এলাকার কারও কারও সঙ্গে বিরোধ তৈরি হতে পারে। কিন্তু হয়তো পারভেজকে না পেয়ে প্রতিশোধ নিতে সাবেক কাউন্সিলর হান্নান সরকারের নির্দেশে বাবু ও তার গ্রুপের লোকজন তাকে কুপিয়ে হত্যা করেছে। রাতে কবুতরের খাবার কিনতে গেলে এ ঘটনা ঘটে।

অপরদিকে নিহত স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা মেহেদী হাসানের বাড়িতেও চলছে শোকের মাতম। নিহতের মা নাজমা বেগম ছেলে হত্যার বিচার দাবি করে বলেন, সন্ত্রাসীরা আমার ছেলেকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করেছে। আমার ছেলে কোনও অপরাধ করেনি। আমি এই ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চাই।

নিহত মেহেদী হাসানের বড় ভাই খালিদ হাসান বলেন, রেললাইন এলাকার রনি, জাফর, রায়হান গ্রুপ এলাকায় ছিনতাইসহ নানা অপকর্ম করে বেড়ায়। কিছুদিন আগে পার্শ্ববর্তী এলাকার লোকজনের সঙ্গে তাদের বিরোধ দেখা দেয়। এ ঘটনায় মেহেদী তাদের বিচার করে দিয়েছে। এরপরও তারা প্রতিপক্ষের লোকজনকে কুপিয়ে আহত করেছে। এ ঘটনায় থানায় অভিযোগ করা হয়েছে। শনিবার (২১ জুন) কোনও একটি ইস্যুতে এলাকায় ফের ঝামেলা শুরু হয়। এর মধ্যে কে বা কারা কুদ্দুস নামে এক ব্যক্তিকে কুপিয়ে হত্যা করে। এই ব্যক্তি ভালো মানুষ ছিল। মূলত তার ছেলে পারভেজ ওই গ্রুপের (রনি-জাফর) সঙ্গে জড়িত। তবে এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনার সময় আমি আমার ভাইকে বাড়ির বাইরে যেতে দেইনি। আমি তাকে ধমক দিয়ে বাড়ির ভেতরে অবস্থান করতে বলি।

তিনি বলেন, রাত সাড়ে ১১টার দিকে মেহেদী বন্দর বাজার হয়ে সিরাজউদ্দৌলা ক্লাবের সামনে দিয়ে তার নেতা আবুল কাউসার আশার বাড়ির দিকে যাচ্ছিল। এ সময় রনি-জাফর গ্রুপের ৫০-৬০ জন লোক তাকে মারধর করে। পরে তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়া হলে তার মৃত্যু হয়।

তিনি আরও বলেন, আমার ভাই মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত রয়েছে। সে আবুল কাউসার আশার অধীনে রাজনীতি করে আসছে। বিএনপির রাজনীতির সুবাদে স্থানীয় সাবেক কাউন্সিলর ও মহানগর বিএনপি নেতা হান্নান সরকারের সঙ্গেও রাজনীতি করেছে।

এ বিষয়ে বন্দর থানা স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য সচিব মোশাররফ হোসেন বলেন, নিহত মেহেদী হাসান এক সময় নারায়ণগঞ্জ মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ও পরে বন্দর থানা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক পদে ছিল। সে বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিল। দলের বিভিন্ন সভা-সমাবেশে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছে। তবে বর্তমানে কোনও পদে নেই।

তিনি আরও বলেন, রনি ও মেহেদী হাসান একসঙ্গে স্বেচ্ছাসেবক দলের রাজনীতি করতো। তারা আবুল কাউসার আশা ও হান্নান সরকারের রাজনীতি করতো। তাদের চলাফেরা ছিল একসঙ্গে। তবে সম্প্রতি রনি মাদকের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছে, গড়ে তুলেছে কিশোর গ্যাং। এদিকে কোনও একটি বিষয়ে তাদের মধ্যে বিরোধ তৈরি হয়েছে। সেই বিরোধ থেকে দুই পক্ষের মধ্যে দফায় দফায় ঝগড়া বিবাদ হয়েছে। তবে মেহেদী হাসানকে রনি মেরেছে কি না তা এখনও নিশ্চিত নই। যদিও স্থানীয়রা অনেকে বলছেন, রনি গ্রুপের লোকজন মেহেদীকে পিটিয়ে হত্যা করেছে। এই পুরো বিষয়টি তদন্ত করে পুলিশ বের করবে।

স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা হত্যার ঘটনায় সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, দলের হাইকমান্ড থেকে বলা হয়েছে বিশৃঙ্খলা ও ঝগড়া-বিবাদে জড়িত না হওয়ার জন্য। এখন উভয় পক্ষ ঝগড়া-বিবাদ করলে দল থেকে কারও বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়ে নির্দেশনা নেই। তাছাড়া মেহেদী হাসান ও রনি এখন স্বেচ্ছাসেবক দলের কমিটিতে নেই। ফলে এ বিষয়ে আপাতত কোনও ব্যবস্থা গ্রহণের বিষয়ে নির্দেশনা নেই

নবীনতর পূর্বতন

Smartwatchs